Facebook Twitter Instagram
    সংবাদ শিরোনাম
    • সর্বোচ্চ ঝাঁকুনি দেখল বাংলাদেশ : বিশেষজ্ঞ
    • বেলকুচির বিএনপি নেতা রাজ্জাক মণ্ডলের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার 
    • বেলকুচিতে “মাহিন সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন! 
    • রাজ্জাক আমার সব ওরে ছাড়া বাঁচবো না
    • উজিরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন, সভাপতি মাসুম সম্পাদক মুন্না 
    • আত্মহত্যাকারীর জন্য কি দোয়া করা যাবে? আত্মহত্যা আল্লাহর নিয়মের ওপর চূড়ান্ত হস্তক্ষেপ
    • ছাত্র-জনতার আন্দোলন ২০২৪-এর সকল শহীদদের স্মরণে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত
    • চৌহালী যুব অধিকার পরিষদের কমিটি গঠন, সভাপতি হাসান খান তীব্র ও সম্পাদক মো: শাহজালাল রহমান 
    • উল্লাপাড়া সরকারি আকবর আলী কলেজ ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল 
    • সিরাজগঞ্জে খাজা মোজাম্মেল হক্ (রঃ) ফাউন্ডেশন বৃত্তি ও সনদ প্রদান
    Facebook Twitter Instagram
    www.ss24bd.comwww.ss24bd.com
    • প্রচ্ছদ
    • জাতীয়
    • রাজধানী
    • রাজনীতি
    • আন্তর্জাতিক
    • বরিশাল বিভাগ
      • বরিশাল
      • পটুয়াখালী
      • ঝালকাঠি
      • পিরোজপুর
      • বরগুনা
      • ভোলা
    • সকল বিভাগ
      • ঢাকা বিভাগ
        • নরসিংদী
        • গাজীপুর
        • শরিয়তপুর
        • নারায়ণগঞ্জ
        • টাঙ্গাইল
        • কিশোরগঞ্জ
        • মানিকগঞ্জ
        • ঢাকা
        • মুন্সিগঞ্জ
        • মাদারিপুর
        • রাজবাড়ী
        • গোপালগঞ্জ
        • ফরিদপুর
      • খুলনা বিভাগ
        • চুয়াডাঙ্গা
        • ঝিনাইদহ
        • নড়াইল
        • বাগেরহাট
        • মাগুরা
        • মেহেরপুর
        • যশোর
        • কুষ্টিয়া
        • সাতক্ষীরা
      • চট্টগ্রাম বিভাগ
        • চট্টগ্রাম
        • কক্সবাজার
        • কুমিল্লা
        • খাগড়াছড়ি
        • চাঁদপুর
        • ব্রাহ্মণবাড়িয়া
        • মাইজদী
        • নোয়াখালী
        • রাঙ্গামাটি
        • লক্ষ্মীপুর
        • ফেনী
        • বান্দরবান
      • রাজশাহী বিভাগ
        • নওগাঁ
        • নাটোর
        • পাবনা
        • বগুড়া
        • রাজশাহী
        • চাঁপাইনবাবগঞ্জ
        • জয়পুরহাট
        • সিরাজগঞ্জ
      • সিলেট বিভাগ
        • সিলেট
        • সুনামগঞ্জ
        • হবিগঞ্জ
        • মৌলভীবাজার
      • রংপুর বিভাগ
        • দিনাজপুর
        • নীলফামারী
        • পঞ্চগড়
        • রংপুর
        • গাইবান্ধা
        • ঠাকুরগাঁও
        • লালমনিরহাট
        • কুড়িগ্রাম
      • ময়মনসিংহ বিভাগ
        • ময়মনসিংহ
        • নেত্রকোনা
        • জামালপুর
        • শেরপুর
    • খেলা
      • ফুটবল
      • বিপিএল
      • ভলিবল
      • কাবাডি
      • হকি
      • টেনিস
      • হ্যান্ডবল
      • ক্রিকেট
    • অন্যান্য
      • ইসলাম ও জীবন
      • রেসিপি
      • স্বাস্থ্য, ফিটনেস ও চিকিৎসা
      • ভিডিও গ্যালারি
      • ফিচার
      • বিনোদন
      • তথ্যপ্রযুক্তি
      • সম্পাদকীয়
      • সাহিত্য
      • লাইফ স্টাইল
      • শিক্ষা
    www.ss24bd.comwww.ss24bd.com
    Home»ফটো গ্যালারী»শীতে গ্রাম বাংলার চাষীদের বৈচিত্র্যপূর্ণ উৎসবের প্রধান উপাদান খেজুর রস
    ফটো গ্যালারী

    শীতে গ্রাম বাংলার চাষীদের বৈচিত্র্যপূর্ণ উৎসবের প্রধান উপাদান খেজুর রস

    আরিফুর রহমান সুমনBy আরিফুর রহমান সুমনDecember 22, 2019Updated:December 22, 2019No Comments4 Views
    Facebook Twitter Pinterest LinkedIn WhatsApp Reddit Tumblr Email
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Pinterest Email
    খেজুর রস শীত কালে গ্রামীণ সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকায় যেন এক গুরুত্ব পূর্ণ উপাদান। স্বপ্ন ও প্রত্যাশায় অনেক খানি খেজুর গাছের সঙ্গে চাষীদের অঙ্গাঅঙ্গিভাবেই বসবাস হয়ে উঠে। নানা ভাবে জড়িত চাষীর জীবন সংগ্রামে অনেক কষ্টের মাঝে অনেক প্রাপ্তিই যুক্ত হয় বাংলার এমন জনপ্রিয় তরুবৃক্ষ খেজুর গাছের সঙ্গে। ভূমিহীন চাষী, প্রান্তিক চাষী, দারিদ্র ক্লিষ্ট মানুষের জন্যেই যেন এমন সময়টা অনেক আনন্দদায়ক। কারণ, এমন খেজুর গাছই তো চাষীর অন্নদাতা।
    জানা যাক, হেমন্তের শেষেই শীতের ঠান্ডা পরশে গ্রামবাংলার হরেক রকমের চাষী খেজুর গাছের মিষ্টি রসে নিজকে ডুবিয়ে নেওয়ার সুন্দর মাধ্যম সৃষ্টি করে। আবহমান গ্রামবাংলার চাষীদের যেন একঘেয়েমির যান্ত্রিকতায় জীবনযাপনের অনেক পরিবর্তন আনে শীতকালের ঋতুচক্র। শীতকালে বৈচিত্র্যপূর্ণ গ্রামীণ সংস্কৃতির মাঝেই যেন ‘খেজুর রসের পিঠা’ শৈল্পীক ঐতিহ্যের বহুমুখী সমারোহ কিংবা প্রাণোচ্ছলতায় বারবারই ফিরে আসে।
    তাদের খেজুর গাছের যত্ন-আত্তি না করলে যে রস মিলবে না। আর রস না মিললে গুড় হবে কি করে। পাটালি না দেখলে যেন ঘুম আসে না চাষীর। চাষী তাদের মেয়ে বা বউয়ের হাতের কাঁচা সুপারির কচি পান গালে ভরে বাঁশের ডালি মাথায় করে গঞ্জে বা দূর্বতী হাটে যাবেই বা কি করে। পাটালি গুড়ের মিষ্টিমধুর গন্ধে চাষীরা বিক্রয় কাজে না থাকলে পেটে ভাতে বাঁচবে কি করে। শীত আমেজে প্রকৃতির মাঝ হতে সংগীহিত খেজুর রস চাষীরা যেন চষে বেড়ায় সকাল, বিকেল ও সন্ধ্যায় মেঠো পথ ধরে, তারই বহিঃপ্রকাশে যেন চমৎকার নান্দনিকতা এবং অপরূপ দৃশ্য অনুভব করে, তা যেন অবশ্যই এক শৈল্পীকতার নিদর্শন। এমন শৈল্পীক আস্থা ও বিশ্বাসকে নিয়ে প্রকৃতির মাঝে বিশাল আকৃতির এক কুয়াশা চাদরে মুড়ি দিতে হয়। এই শীতেকালে রূপ সৌন্দর্যের আর একটি উপাদেয় সামগ্রী খাঁটি শরিয়া তেল, যা শরীরে মালিশ করে অনেকাংশেই ত্বকের মশ্রিণতা এবং ঠান্ডা দূর করে খেজুর গাছে উঠতে। গ্রামে খুব ভোরে খেজুর গাছ হতে রসের হাড়ি নামিয়ে আনতে ব্যস্ত হন চাষী। রাতের এ হিমশীতল রস ভোরে হাড় কাঁপানি ঠান্ডায় গাছ থেকে নামিয়ে খাওয়ার যে স্বাদ তা একেবারেই যেন খুব আলাদা। আসলে ভোর বেলায় রস খেলে শীত আরো অনেক জাঁকিয়ে বসে। আবার শীতে শরীর কাঁপানির এক স্পন্দন যেন চরম মজা দায়ক।
    শীত লাগে লাগুক না কেন, তবুও রস খাওয়ার কোন বিরাম নেই। এক গ্লাস, দুই গ্লাস খাওয়ার পরপরই কাঁপতে কাঁপতে যেন আরও এক গ্লাস মুড়ি মিশিয়ে মুখে তুলে চুমক দেয়া আর রোদ পোহানো সে যে কি আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা দূরহ। এই শীতের কুয়াশা ঢাকা সকালে গ্রামের ছেলে মেয়েরা ঘুম থেকে খুব ভোরে উঠে হাত মুখ ধুয়ে খড় কুটোয় আগুন জ্বেলে হাত পা গরম করে এবং অপেক্ষা করে কখন রোদের তেজ প্রখর হবে। তাদের রোদ পোহানোর আরামের সঙ্গে আরও অপেক্ষা, তা হলো তাদের প্রিয় খেঁজুর রস। কখন যে আসে আর তখনই খাবে। সে রস আসলে যথা সময়ে হাজির হলে তাদের কাছে যেন আনন্দ উল্লাসের কোনই কমতি হয়না। গ্রামবাংলার অভাবী মেয়েরা রংবে রংয়ের যেসব খেজুর পাতায় খেজুর পাটি তৈরী করে তার উপরই যেন চলে রস খাওয়ার আসর। উপার্যনের জন্যই খেজুর পাতা শুকিয়ে তা দিয়ে খেজুর পাটি তৈরী পর বিক্রয় করে সংসারের কিছুটা অর্থ সংকোলান হয়। সুতরাং এই খেজুরের পাটিতেই গ্রামের অনেক পরিবার ঘুমানো কাজে তা ব্যবহার করে। খেজুর পাতায় এক ধরনের সাহেবী টুপিও তৈরি হয়। খেজুরের পাতা, ডাল এবং গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। আর মোরুব্বা তৈরিতেও খেজুর কাটার ব্যবহার প্রচলিত আছে। এক কথায় বলা চলে খেজুর গাছের পাতার ও ডাল সেতো কবর পর্যন্ত চলে যায়।
    খেজুর গাছ ছয় সাত বছর বয়স থেকে রস দেওয়া শুরু করে। পঁচিশ থেকে ত্রিশ বছর পর্যন্ত রস দেয়। গাছ পুরনো হয়ে গেলে রস কমে যায়। আর পুরনো খেজুর গাছের রস খুব মিষ্টি হয়। মাঝ বয়সী গাছ থেকে সবচেয়ে বেশি রস পাওয়া যায়। বেশি রস সংগ্রহ করা গাছের জন্য অবার অনেক ক্ষতিকর। রস সংগ্রহের জন্য কার্তিক মাসে খেজুর গাছ কাটা শুরু হয়। কার্তিক মাস থেকেই রস পাওয়া যায়। রসের ধারা চলতে থাকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। শীতের সঙ্গে রস ঝরার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। শীত যত বেশি পড়বে তত বেশি রস ঝরবে। রসের স্বাদও তত মিষ্টি হবে। অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ মাস হলো রসের ভর মৌসুম। অগ্রহায়ণ থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত একটি খেজুর গাছে মাসে ৪০ কেজি রস পাওয়া যেতে পাবে। খেজুর গাছ শুধু রস দিয়েই ক্ষান্ত হয় না। শুকনো খেজুরে ভেষজ গুন অনেক রয়েছে, খেজুরের বীজগুলো বাহির করে নিয়ে দুধে খেজুর গুলো মিশিয়ে ভাল ভাবে ফুটিয়ে গরম করে এই দুধ, খেজুর ঠান্ডা করে শিশুকে খাওয়ালে শক্তি বাড়ে৷ আবার একটি শুকনো খেজুরের ফলের পুষ্টি মান তুলে ধরে বলা যায়, প্রায় ৭৫-৮০% শর্করা, ২% আমিষ এবং প্রায় ২.৫% স্নেহজাতীয় পদার্থ থাকে। ১০০ গ্রাম শাঁসে ২০ ভাগ পানি, ৬০-৬৫ ভাগ শর্করা, ২ ভাগ আমিষ এবং খুব সামান্য কপার, সালফার, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এ, বি-১, বি-২ এবং খনিজ লবণ খোঁজে পাওয়া যায়।
    চাষীরা দিনের বেশির ভাগ সময় কাটান এ গাছে থেকে সে গাছে। মাটিতে পা ফেলার ফুরসতটুকুও পায় না অভাবী এই মানুষ গুলো। শীত আসা মাত্রই খেজুর গাছ ‘তোলার জন্য’ অনেক আগে থেকেই সকাল-সন্ধ্যায় যেন লেগে থাকে চাষী। খেজুর গাছ বিশেষ কায়দায় কাটতে হয়। আর এই গাছ গুলো কাটে যারা তাদেরকে ‘গাছি’ বলা হয়। তারা বিভিন্ন উপকরণ সমন্বয়ে গাছি নাম ধারি মানুষ পরিচ্ছন্ন ভাবে গাছ কাটার জন্য ব্যস্ত হয়ে যান। তারা গাছ কাটতে ব্যবহার করেন দা, দড়ি, এক টুকরো চামড়া বা পুরনো বস্তা আবার দা রাখার জন্য বাঁশ দিয়ে তৈরি থলি বা ঝাঁপি। সে ঝাঁপি গাছিরা রশি দিয়ে খুব যত্নে দা রেখে এ গাছ থেকে সে গাছে উঠা, নামা করে সুবিধা পায়। আবার কোমরে বেশ কিছু চামড়া বা বস্তা বেঁধে নেয় যেন গাছে উঠা নামায় কোন প্রকার সমস্যা না। গাছ কাটার জন্য গাছি শরীরের ভারসাম্য রক্ষার সময় কোমর বরাবর গাছের সঙ্গে দড়ি বেঁধে নেয়। দড়িটা বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। এই দড়ির দুই মাথায় বিশেষ কায়দায় গিট দেওয়া থাকে। গাছে উঠার সময় গাছি অতি সহজে মুহূর্তের মধ্যে গিঁট দুটি জুড়ে দিয়ে নিজের জন্য গাছে উঠার নিরাপদ ব্যবস্থা করে নেয়।
    রস জ্বাল দিতে যে পরিমাণ জ্বালানির প্রয়োজন তা পাওয়া যায় না এমন আক্ষেপে চাষীর বউ ঝগড়া করলেও চালের আটায় তৈরি ভাপা পিঠা খেজুরের গাঢ় রসে ভিজিয়ে খাওয়ার পর যেন সব রাগ মাটি হয়ে যায়। আবার কখনও সখনও চাষীর বউকে এক প্রকার সান্তনা দিয়ে বলে অভাবের সংসারে যা আছে তা দিয়ে এ পেশা চালালে বাঁচা যাবে কি করে। বছরে পাঁচ মাস ধরেই তো খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করা হয় আর তা খড়কুটার জ্বালানিতে গুড় বানিয়ে বাজারে বিক্রি হয় বলেই কোন মতে পেট চলছে। বউ আবার মুচকি হাসি দিয়েই বলে, সংসার চলছে তো ভালোই কিন্তু মেয়ের বিয়ের জন্য ভাবো কিছু। তার তো বিয়ের বয়স হয়েছে, এমন কথাও চলে আসে খেজুর গাছির ছোট্ট পরিবারে। চাষীর খেয়াল তো আছে বৈকি তবে আরও পরিশ্রম ও কষ্ট করার প্রয়োজন হবে, সামনের শীতে চাষীর ইচ্ছা আরোও বেশ কিছু খেজুর গাছ বর্গা নিলেই মেয়ের বিয়ের কিছু টাকা হাতে আসবে। এমন কথা সচরাচর শুনা যায় খেজুর চাষির কন্ঠে। চাষির আদরের বিবাহিত মেয়ে জামাইকে দাওয়াত দিয়ে খেজুর রসের পিঠা পায়েসের তৈরী আয়োজনে চরম ধুম পড়ে। চাষীর মেয়ে, বউ ঝিয়েরা খেজুরের রস বা গুড় তৈরিতে অত্যন্ত ব্যস্ত সকালের মনোরম পরিবেশে উপভোগ করে। এমন এক চমৎকার দৃশ্য বড়ই শৈল্পিক উপাখ্যান। শুধুই কি তাই, শীতের এই সকালে রস বা পাটালি গুড় তৈরীতে জ্বালানীর পাশে বসে অথবা লেপমুড়ি দিয়ে চিড়া, মুড়ির মোয়া খাওয়ার মজার পরিবেশ চাষীর পরিবারের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সহ আদরের মেয়ে জামাই ভুল করে না। তাদের শীতের উপাদেয় খাবার খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত চাষীরা এ গাছ থেকে ও গাছে খেজুর রস সংগ্রহে শীত কাঁপানি কন্ঠে গান ধরে।
    রস জ্বাল দিয়ে তৈরি হবে গুড়। সেই গুড়ের আবার রকমফের আছে। যেমন, পাটালি গুড়, ঝোলা গুড়। এ সব গুড় বিভিন্ন ভাবে খাওয়া হয়। শীতের খেজুর গাছের রস হতে যে গুড়ে তৈরি তা দিয়ে দুধের পিঠা, পুলিপিঠা, সেম পিঠা আরো কত কিযে পিঠা তৈরী হয় তা না খেলে একেবারে জীবনই বৃথা। পাটালি গুড় দিয়ে মুড়ির মোয়া খাওয়া ও ঝোলা গুড়ের সহিত মচমচে মুড়ি খাওয়ার জনপ্রিয়তা গ্রামীণ শুধুই মানুষের রয়েছে। এমনিতেই তারা খেজুর গুড় গ্রামের অনেকেই খায়। তবে খেজুরের রস দিয়ে তৈরি রসের পিঠা খুবই সুস্বাদু হয়ে থাকে। আর খেজুর গুড়ের প্রচলিত সন্দেশ হয় তার স্বাদ অপূর্ব। শখ করে অনেক চাষিরা চা খাওয়ার নেশায় ঘরেই চা বানিয়ে খায় খেজুর গুড়কে উপজীব্য করে।
    শীত তার বিচিত্র রূপ ও রস নিয়ে হাজির হয় গ্রাম বাংলায়। নবান্ন উৎসব কিংবা শীতের পিঠা পায়েশ তৈরির উৎসব শীতে ঘটা করেই হয়। শীতে চিরায়ত যা কিছু সৃষ্টির নিয়ামত, তা উপলব্ধি করতে চাইলে অবশ্যই গ্রামে যেতে হবে। শীতের নিরবতার অস্তিত্ব সৌন্দর্য মন্ডিত বাংলাদেশের ষড় ঋতুর এক ঐতিহ্য হিসেবে প্রতিয়মান হয় খেজুর গাছ। আশ্বিনের শুরু থেকেই চাষীরা খেজুর গাছ তোলা এবং পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এই উপযুক্ত সময় তারা নির্ধারণ করে মাঘের ‘বাঘা শীতে’ গুড় বিক্রিয় এবং তৈরীর প্রক্রিয়া যেন শেষ হয়। তাদের প্রক্রিয়াজাত খেজুর গুড়, পাটালি বা রস সারা বছর সংগ্রহ করে রাখে কোন কোন গ্রামের গৃহস্থ পরিবার। গ্রামের বাজার গুলোতেও জমজমাট হয়ে ওঠে খেজুর রস এবং গুড়ে। প্রকৃত পক্ষেই শীতে উৎসব মুখর হয়ে উঠে গ্রামবাংলা। জলাভূমি এবং কিছু পাহাড়ি ভূমি বাদে এদেশে এমন কোনো অঞ্চল নেই, যেখানে খেজুর গাছ জন্মে না। তবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমা অঞ্চলে খেজুর গুড় বাণিজ্যিকভাবেই উৎপাদিত হয়। গাছ কাটার জন্য গাছের মাথার এক দিকের শাখা কেটে চেঁছে পরিষ্কার করে সেই কাটা অংশেরই নিচ বরাবর দুটি খাঁজ কাটার প্রয়োজন পড়ে। সে খাঁজ থেকে কয়েক ইঞ্চি নিচে একটি সরু পথ বের করা হয়। এই সরু পথের নিচে বাঁশের তৈরি নলী বসানো হয়। এই নলী বেয়ে হাড়িতে রস পড়ে। নলীর পাশে বাঁশের তৈরি খিল বসানো হয়। সে খিলেই মাটির হাড়ি টাঙিয়ে রাখা হয়। বিকেল থেকে হাড়িতে রস জমা হতে হতেই সারা রাত্রিতে হাড়ে পূর্ণ হয়। গাছ কাটার পর দুই তিন দিন রস পাওয়া যায়। প্রথম দিনের রসকে বলে জিরান কাট। জিরান কাট রস খুবই সুস্বাদু। প্রথম দিনের রস থেকে ভালো পাটালি গুড় তৈরি হয়। দ্বিতীয় দিনের রসকে বলে দোকাট। তৃতীয় দিনের রসকে বলে তেকাট। রসের জন্য খেজুর গাছে একবার কাটার পর আবারও পাঁচ ছয় দিন পর কাটতে হয়। গাছের কাটা অংশ শুকানোর জন্য এসময় দেওয়া প্রয়োজন পড়ে। খেজুর গাছ কাটা অংশ শুকানোর সুবিধার জন্যই সাধারণত পূর্ব ও পশ্চিম দিকে গাছ কাটা হয়। যাতে সূর্যের আলো সরাসরি কাটা অংশে পড়ে।
    গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য মাটির হাড়ি ব্যবহার করা হয়। হাড়িকে আবার অনেকে বলে ভাঁড়। ঠিলা হিসেবেও হাড়ির নাম ব্যবহার হয়। যে যাই বলুক না কেন, ভাঁড়টি আসলেই খুব ছোট আকৃতির কলসের মতো হয়ে থাকে। মাঝারি আকৃতির দশ বা পনেরো ভাঁড় রস জ্বাল দিয়েই এক ভাঁড় গুড় হয়। সেই এক ভাঁড় গুড়ের ওজন ছয় থেকে আট কেজির মতো বলা চলে। গুড় তৈরির জন্য রস জ্বাল দেওয়া হয় মাটির জালায় বা টিনের তাপালে। খুব সকালে রস নামিয়ে এনেই জ্বালানো হয়। জ্বাল দিতে দিতে এক সময় রস ঘন হয়ে গুড় হয়ে যায়। এ গুড়ের কিছু অংশ তাপালের এক পাশে নিয়ে বিশেষ ভাবে তৈরি একটি খেজুর ডাল দিয়ে ঘষতে হয়। ঘষতে ঘষতে এই অংশটুকু শক্ত হয়ে যায়। আর শক্ত অংশকেই আবার কেউ কেউ বীজ বলে থাকে। বীজের সঙ্গে তাপালের বাকি গুড় মিশিয়ে স্বল্পক্ষণের মধ্যে গুড় জমাট বাঁধতে শুরু করে। তখন এ গুড় মাটির হাঁড়ি বা বিভিন্ন আকৃতির পাত্রে রাখার প্রয়োজন পড়ে। সে গুড় দেখলে বুঝা যাবে, একেবারে জমাট বেঁধে পাত্রের আকৃতি ধারণ করেছে।
    দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বহুকাল ধরে পেশাদার খেজুর গাছ কাটিয়ে আছে। স্থানীয় ভাষায় এদের বলা হয় গাছি। কার্তিক মাসের শুরু হতে চৈত্রের শেষ পর্যন্ত তারা খেজুর গাছ কাটায় নিয়োজিত থাকে। যেসব চাষির স্বল্প সংখ্যক খেজুর গাছ আছে নিজেরাই তারা তা কাটে থাকে। তারাই রস পাড়ে ও বাড়িতে নিয়ে এসে জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করে। শীতের এ প্রকোপ যত বেশি হয়, রসও তত বেশি পান চাষী। রস গাছে যখন কমে যায় তখন সে রসের স্বাদ যেন বেশী হয়। এ রসকে ‘জিরান কাট’ রস বলে, গন্ধেও এ রস হয় সবচেয়ে উত্তম। এই ‘জিরান কাট’ রস নামানোর পর আবারও রসের ভাঁড় বা কলস গাছে টাঙালে তখন এই খেজুর গাছ হতে যে রস পাওয়া যাবে তা ‘উলাকাটা’ রস। গ্রাম বাংলায় এই শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশে যারা খেজুর বনের চাষ করে তারাই তো গভীব রাতে খেজুর রস নামিয়ে উনুনের আগুনে জ্বালাতে ব্যস্ত হয়। সত্যিই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর বনের পাশে উঁচু ভিটায়। এমন নিবিড় স্তব্ধতার মধ্যেও যেন জীবন সংগ্রামে তাদের মজার স্পন্দন উপলব্ধি হয়। উনুনের পাশেই থাকে গাছি বা শ্রমিক মজুর, তাদের থাকবার জন্য বানায় কুঁড়ে ঘর, খেজুরের পাতা কিংবা বিচালি দিয়ে ছাওয়া হয়। কান পাতলে শোনা যায়, গাছিয়া নিঃসঙ্গতা কাটাতে গ্রাম এলাকায় প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের গান গেয়ে থাকে। তাদের সুরে আছে অদ্ভুত প্রাণময়তা ও আবেগ, সহজেই হূদয়ে ছুঁয়ে যাওয়ার মতো।
    পত্রবৃন্তে আবৃত খেজুরের কাণ্ডটি সরল, গোলাকৃতি এবং ধূসর বর্ণের হয়। মাথায় মুকুটের মতো ছড়ানো পাতা গুলো উর্ধ্বমুখী ও ছুরির ফলার মতো তীক্ষ্ণ। খেজুরের ‘ভিন্নবাসী’ গাছে স্ত্রী ফুল ও পুরুষ ফুল আলাদা ভাবেই গাছে জন্মায়। খেজুর গাছের পুং পুষ্পমঞ্জরী খাটো, ফুল সাদা মোচার মত বা ঘিয়ে রঙের মতো দেখতে হয়। খেজুর গাছের পরিপক্ক এ ফুলের মোচায় ঝাকুনি দিলেই ধুলার মতো পুংরেণু বাহির হতে দেখা যায়। আবার স্ত্রী পুষ্প মঞ্জরী লম্বা এবং ফুলের রং হালকা সবুজ হয়ে থাকে। স্ত্রী গাছে অজস্র ফল হয়ে থাকে তা অনেক উজ্জ্বল দেখায়। একটা মজ্ঞরীতে অনেক স্ত্রী ফুল ফোটে, যা থেকে একটি কাঁদি তৈরী হয়। খেজুর গাছের মাথায় খুব সূচালো অসংখ্য কাঁটার সমন্বয়ে ঝোপের মতো হয়ে সৃষ্টি এ গাছ। খেজুর গাছের পাতার গোড়ার দিকের প্রতিটি পাতা কাঁটায় রূপান্তরিত হয়। সাধারনত এই পাতা ৩ মিটার লম্বা এবং নীচের দিকে বিশেষ করে বাঁকানো হয়। খেজুর গাছ সারা বছর একই রকমেই থাকে। পাকা ফল দেখতে পার্পেল-লাল রঙের এবং তা সুমিষ্ট হয়, খাওয়াও যায়। পাখিদেরও প্রিয় এটি।
    শীত কালে খেজুরের রস সবারই রসনা তৃপ্ত করে। আর খেজুর গাছের মাথার কচি অংশ তো দারুন লাগে খেতে। খেজুর গাছ ছয় সাত বছর বয়স থেকে রস দেওয়া শুরু করে। পঁচিশ থেকে ত্রিশ বছর পর্যন্ত রস দেয়। গাছ পুরনো হয়ে গেলে রস কমে যায়। পুরনো গাছের রস খুব মিষ্টি হয়। মাঝ বয়সী গাছ থেকে সবচেয়ে বেশি রস পাওয়া যায়। বেশি রস সংগ্রহ করা গাছের জন্য ক্ষতিকর। রস সংগ্রহের জন্য কার্তিক মাসে খেজুর গাছ কাটা শুরু হয়। কার্তিক মাস থেকেই রস পাওয়া যায়। রসের ধারা চলতে থাকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। শীতের সঙ্গে রস ঝরার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। শীত যত বেশি পড়বে তত বেশি রস ঝরবে। রসের স্বাদও তত মিষ্টি হবে। অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ মাস হলো রসের ভর মৌসুম। একবার গাছ কাটার পর দুই তিন দিন রস পাওয়া যায়। প্রথম দিনের রসকে বলে জিরান কাট। জিরান কাট রস খুবই সুস্বাদু। প্রথম দিনের রস থেকে ভালো পাটালি গুড় তৈরি হয়। দ্বিতীয় দিনের রসকে বলে দোকাট। তৃতীয় দিনের রসকে বলে তেকাট। রসের জন্য গাছ একবার কাটার পর পাঁচ ছয় দিন পর আবার কাটা হয়। গাছের কাটা অংশ শুকানোর জন্য এসময় দেওয়া হয়। কাটা অংশ শুকানোর সুবিধার জন্যই সাধারণত পূর্ব ও পশ্চিম দিকে গাছ কাটা হয়। যাতে সূর্যের আলো সরাসরি কাটা অংশটুকুতে পড়ে। রস পেতে হলে খেজুর গাছ বিশেষ কায়দায় কাটতে হয়। যারা গাছ কাটে তাদের বলা হয় গাছি। গাছিদের গাছ কাটার জন্য কয়েকটি উপকরণ দরকার হয়। যেমন-দা, দা রাখার জন্য একটি ঝাঁপি, দড়ি এবং এক টুকরো চামড়া বা পুরনো বস্তা। গাছি যে ঝাঁপি ব্যবহার করে তা বাঁশ দিয়ে তৈরি। গাছে উঠার সময় গাছি এই ঝাঁপিতে দা রাখে। কোমরে বেঁধে নেয় চামড়া বা বস্তা। গাছ কাটার সময় শরীরের ভারসাম্য রক্ষার জন্য গাছি কোমর বরাবর গাছের সঙ্গে দড়ি বেঁধে নেয়। দড়িটা বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। এই দড়ির দুই মাথায় বিশেষ কায়দায় গিট দেওয়া থাকে। গাছে উঠার সময় গাছি অতি সহজে মুহূর্তের মধ্যে গিঁট দুটি জুড়ে দিয়ে নিজের জন্য গাছে উঠার নিরাপদ ব্যবস্থা করে নেয়।গাছ কাটার জন্য গাছের মাথার এক দিকের শাখা কেটে চেঁছে পরিষ্কার করা হয়। কাটা অংশের নিচের দিকে দুটি খাঁজ কাটা হয়। খাঁজ থেকে কয়েক ইঞ্চি নিচে একটি সরু পথ বের করা হয়। এই সরু পথের নিচে বাঁশের তৈরি নলী বসানো হয়।
    এই নলী বেয়ে হাড়িতে রস পড়ে। নলীর পাশে বাঁশের তৈরি খিল বসানো হয়। এই খিলে মাটির হাড়ি টাঙিয়ে রাখা হয়। এই হাড়িতে রস জমা হয়।গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য মাটির হাড়ি ব্যবহার করা হয়। এই হাড়িকে বলে ভাঁড়। কোথাও বলে ঠিলা। ভাঁড় দেখতে ছোট আকৃতির কলসের মতো। খেজুর রস মাঝারি আকৃতির দশ থেকে পনেরো ভাঁড় রস জ্বাল দিলে এক ভাঁড় গুড় হয়। এই এক ভাঁড় গুড়ের ওজন হয় ছয় থেকে আট কেজির মতো।খেজুরের রস হতে তৈরি গুড়। মিষ্টি জাতীয় খাবার। বাংলাদেশে বেশ প্রসিদ্ধ। শীতকালে তৈরি হয় এবং সারা বছরই পাওয়া যায়। প্রচুর খনিজ ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। গুড় তৈরির জন্য রস জ্বাল দেওয়া হয় মাটির জালায় বা টিনের তাপালে। খুব সকালে রস নামিয়ে এনেই জ্বালানো হয়। জ্বাল দিতে দিতে এক সময় রস ঘন হয়ে গুড় হয়ে যায়। এ গুড়ের কিছু অংশ তাপালের এক পাশে নিয়ে বিশেষভাবে তৈরি একটি খেজুর ডাল দিয়ে ঘষতে হয়। ঘষতে ঘষতে এই অংশটুকু শক্ত হয়ে যায়।
    এই শক্ত অংশকে বীজ বলে। বীজের সঙ্গে তাপালের বাকি গুড় মিশিয়ে দেওয়া হয়। স্বল্পক্ষণের মধ্যে গুড় জমাট বাঁধতে শুরু করে। তখন এই গুড় মাটির হাঁড়ি বা বিভিন্ন আকৃতির পাত্রে রাখা হয়। গুড় জমাট বেঁধে পাত্রের আকৃতি ধারণ করে। এই খেজুর গুড় যারা বানায়, তাদের ঐতিহ্যগত পরিচয় তারা গুড়-শিল্পী বা শিউলি। এই শিউলিরা আদতে খেতমজুর। বর্ষার দিনে অনেক অঞ্চলে চাষাবাদের পর ভূমিহীন খেত মজুরদের কোনও কাজ থাকে না। অনাহার-অর্ধাহারে তাদের দিন কাটাতে হয়। সেই সময় শিউলিরা দাদন নেয় মহাজনের কাছ থেকে খেজুর গাছ। বিনিময়ে তারা মহাজনের নির্ধারিত দামে তাদের কাছেই অনেক সময় গুড় বিক্রি করতে বাধ্য হয়। খেজুর গুড় সারা বাংলাদেশেই পাওয়া যায়। খেজুর গাছ আরবের মেসোপটেমিয়াই আদি জন্মস্থান হিসেবে বিবেচিত।এদেশে যেসব খেজুর চাষ হয় তার নাম Phoenix sylvestris। এই খেজুর গাছের উচ্চতা ১০ থেকে ১৫ মিটার হয়ে থাকে। গ্রামবাংলার এই জাতটিকে বুনো জাত হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়।

    লেখক:

    নজরুল ইসলাম তোফা,  টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা,
    চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক।
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Telegram Email
    আরিফুর রহমান সুমন
    • Website
    • Facebook

    Related Posts

    উজিরপুর শেরেবাংলা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার উদ্ভোধন।

    January 29, 2025

    গুরু শিষ্যের প্রেমময় জীবন

    March 14, 2024

    জাতীয় কবিকে নিয়ে আইভি সাহার কবিতা “কবি বুলবুল

    May 24, 2022

    Comments are closed.

    © 2025 SS24BD Designed by SS24BD.COM.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Go to mobile version